ঢাকা মহানগরীর ডেমরা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালীন সময়ে ডাকাত সরদার মোঃ উজ্জল হোসেন ও তার অন্যতম সহযোগী মোঃ রাশেদকে ০১ টি বিদেশি পিস্তল, ০১ টি বিদেশি বিভলবার, ০৩ টি ককটেল এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়ক ও বিভিন্ন বাড়িতে বেশকিছু ডাকাতির ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে র‌্যাব এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন বাশেরপুল এলাকায় কতিপয় ডাকাত দল কর্তৃক ডাকাতি প্রস্তুতিকালীন সময় ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃত বাড়ির সামনে র‌্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ০৯/০৫/২০২৩ তারিখ ১৭০০ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দার ১। মোঃ উজ্জল হোসেন (৩৩), পিতা-মোঃ আমির হোসেন, সাং-মানিকদিয়া, থানা-সবুজবাগ, ডিএমপি, ঢাকা এবং তার অন্যতম সহযোগী ২। মোঃ রাশেদ (৩৭), পিতা-মৃত নুরুল হক, সাং-শ্যামপুর পালপাড়া, থানা-কদমতলী, ডিএমপি, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আসামীদের নিকট হতে ০১টি বিদেশি পিস্তল, ০১টি বিদেশি বিভলবার, ০৩টি ককটেল, ০১টি ম্যাগাজিন, ০২ রাউন্ড তাজা গুলি, ০৬ রাউন্ড বøাংক কার্তুজ, ০১টি গুলির খালী খোসা, ০১ টি সুইচ গিয়ার, ০১টি চাপাতি, ০২টি হাতুড়ি, ০১টি প্লাস, ০৩টি কস্টেপ, ০১টি টর্চ লাইট, ০১টি স্ক্র ড্রাইভার, ০১টি হেস্কো বেøড, ০২টি গামছা, ইলেকট্রিক তার, রশি, ০১টি ব্যাগ এবং ০২টি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত ডাকাত দলের ০৫ জন সদস্যের মধ্যে ০২ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ০৩ জন ডাকাত পলাতক রয়েছে। পলাতক ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত ডাকাত দলের সর্দার মোঃ উজ্জল হোসেন পুরো দলটি পরিচালনা করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে উজ্জল ডাকাতের নেতৃত্বে তার দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ লুটপাট, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তার দলের মোট ১০ জন ডাকাত সদস্য রয়েছে। উক্ত দলটি রাজধানীর ডেমরা, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বড় ধরনের ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিগত ০৫ মাসে নারায়ণগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ০৭ টি ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এছাড়াও উক্ত দলটি আরও ৮/১০ টি বড় ধরনের ডাকাতির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তার দলের অন্যান্য সহযোগীরা ডাকাতির জন্য বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি রেকী করত। ডাকাত সর্দার উজ্জল তার দলের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াত এবং ডাকাতির জন্য রেকী পূর্বক বিভিন্ন বাড়ি টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদের রেকীর টার্গেট অনুযায়ী ধৃত উজ্জল উক্ত দলের অন্যান্য সহযোগীদের একত্র করে টার্গেটকৃত বাড়িগুলোতে ডাকাতির জান্য গোপনে প্রস্তুতি গ্রহণ করত। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী সময় সুযোগবুঝে টার্গেটকৃত বাড়িতে বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার, বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সর্জিত হয়ে অতর্কিতে হামলা চালাত।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে, ডেমরা এলাকায় সম্প্রতি তারা একটি ৪তলা বাড়িকে টার্গেট করে। উক্ত বাড়ির মালিক জনৈক নিলুফা ইয়াসমিন বাড়ির অন্যান্য ফ্লোর ভাড়া দিয়ে ২য় তলায় নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটে একা বসবাস করেন। তার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ একজন প্রবাসী এবং সম্প্রতি তার দুই ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন যাবৎ সে উক্ত বাড়িতে একা বাস করে আসছিল। ডাকাত উজ্জল ও তার দল গত এপ্রিল মাস থেকেই এই বাড়িটি টার্গেট করে। এরপর তারা বেশ কয়েকবার বাড়িটির ডিস সংযোগের তার কেটে দেয় এবং বাসায় নক করে ডিসের মেকানিক পরিচয়ে ডিস সংযোগ ঠিক করার নামে বাসাটি রেকী করে। পরবর্তীতে ০৮/০৫/২০২৩ তারিখ অপরাহ্ণে ডাকাত সর্দার উজ্জল এর নেতৃত্বে আরও ০৪ জন সহযোগীকে নিয়ে বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার, বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সর্জিত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং উক্ত বাড়িতে হামলা করার জন্য প্রবেশকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্তৃক ধৃত হয়।

ধৃত আসামীদ্বয়ের মধ্যে ডাকাত দলের সর্দার উজ্জল হোসেন মূলত ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি তৈরির ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে কাজ করে। সেখানে সে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে তার মামার স্টীলের আসবাবপত্র তৈরির কারখানায় দীর্ঘ ০৫ বছর কাজ করে। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে সে ছন্নছাড়া জীবনযাপন শুরু করে। তখন থেকে ধৃত উজ্জল ছিনতাই, চুরি, মাদকাসক্তির মতো বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। একসময় সে অবৈধভাবে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে ডাকাত চক্র গড়ে তোলে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ এই ডাকাত চক্রটি সে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করে আসছে। তার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

৬। ধৃত রাশেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে মূলত রং মিস্ত্রির কাজ করে এবং সে কাজের অজুহাতে বিভিন্ন বাড়িতে রেকী কার্যক্রম চালায়। রাশেদ কাজের ছদ্মবেশে ডাকাতির শেষে স্থান ত্যাগের রাস্তা রেকী করে রাখে। রেকী শেষে ধৃত রাশেদ ডাকাত দলের নেতা উজ্জলকে তার রেকীর সকল তথ্য জানায়। পরবর্তীতে উজ্জলের নেতৃত্বে দলের অন্যান্য সহযোগীদের একত্র করে তাদের ডাকাতির সকল পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা যোগসাজশে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাতির জন্য অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে টার্গেটকৃত বাড়ীতে যায় এবং সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও তারা মহাসড়কে রাতবিরাতে বা নির্জন সময়ে বিভিন্ন গাড়ি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি ও লুটপাট কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। তার নামে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মামলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে মুক্তির পর ডাকাতির পেশা বেছে নেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।